ছয় মাস বয়স পূর্ণ হওয়ার পর কীভাবে পরিপূরক খাবার শুরু করবেন- এ ব্যাপারে নিয়মিত প্রশ্ন করেন বাবা-মা। আমি যেভাবে বলি সেটা সংক্ষেপে এ রকম। প্রথমে চাল-ডাল-তেল দিয়ে নরম ও পাতলা করে খিচুড়ি তৈরি করুন। এটা দিয়ে শুরু করুন। এরপর দুই-তিন দিনের ব্যবধানে ধাপে ধাপে বিভিন্ন ধরনের সবজি যোগ করুন। যেমন- প্রথম কয়েক দিন আলু, তারপর কয়েক দিন কুমড়া, এরপর পেঁপে ইত্যাদি।
এভাবে ৫-৭ টি সবজি খাওয়া শেখা হলে ২ বা ৩টি সবজি একবারে দিয়ে রান্না করুন। ধারাবাহিকভাবে সবজির পরিমাণ বাড়ান। সবজি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে খিচুড়িতে প্রাণিজ আমিষ, যেমন- মাছ, ডিম, মাংস নরম করে মিশিয়ে নিন। তবে ধীরে-সুস্থে, ধাপে ধাপে সময় নিয়ে। এর পাশাপাশি ডিমের কুসুম কিংবা সিদ্ধ ডিম একটু একটু করে মুখে দিন। তা হলে অচিরেই সে এটা খাওয়া শিখে যাবে। দেশীয় ফল, যেমন- কলা, পেঁপে, আম। যেগুলো হাতে চটকানো যায়, সেগুলো হাতে চটকিয়ে অল্প অল্প করে শুরু করুন। ক্রমে পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। আঙুর, ডালিম ইত্যাদি ফলের রস করেও খাওয়াতে পারবেন।
শিশুর পরিপূরক খাবারে বিভিন্ন শাকসবজি, ফল ও প্রাণিজ খাবার যোগ করে এর পুষ্টির ঘনত্ব বৃদ্ধি করা সম্ভব। পরিপূরক খাবার তৈরি করার সময় মনে রাখতে হবে, প্রথমে সহজে তৈরি করা যায় এমন খাবার অল্প করে পাতলা ও নরম করে ১-২ চামচ করে খাওয়াত হবে। সহজে হজম হয় এমন খাবার দিতে হবে। আবারও বলছি, কমপক্ষে দুবছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে বুকের দুধ বন্ধ করবেন না এবং শিশুকে কখনই কোনো রকম ফর্মুলা খাওয়াবেন না। এভাবে খাবারে অভ্যাস হয়ে গেলে এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবারের পরিমাণ বাড়ান। সহজলভ্য এবং সামর্থ্য অনুযায়ী ঘরের তৈরি খাবার খাওয়ান।
আপনারা প্রতিনিয়ত ঘরে যেসব খাবার খেতে অভ্যস্ত, শিশুকেও তাই খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। সারাদিন ঠিক কতবার খাওয়াতে হবে, তা নির্ভর করে খাবারে বিদ্যমান ক্যালরি এবং প্রতিবারে খাবারের পরিমাণের ওপর। তবে একটি সুস্থ ৬-৮ মাস বয়সী শিশুর জন্য প্রতিদিন ২-৩ বার এবং ৯-১১ মাস বয়সী শিশুর জন্য প্রতিদিন ৩-৪ বার প্রধান খাবার এবং পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী ১-২ বার পুষ্টিকর নাস্তা দেওয়া যেতে পারে। নাস্তায় চটকানো মাছ-মাংস, ফলের রস, চটকানো আলু, চটাকানো শাকসবজি, ডিমের কুসুম, বিভিন্ন প্রকার হালুয়া, পাকা কলা ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে।
মনে রাখবেন, এ সময় অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি নিরাপদ ফুটানো পানি পরিমাণমতো খাওয়ানো গুরুত্বপূর্ণ। এক বছর বয়স থেকে শিশুকে নিজের হাতে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করুন।
Leave a Reply